নাফাখুম
সাধারণ পরিচিতি ও অভিজ্ঞতা
বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার রেমাক্রি
স্থানটি সাঙ্গু নদীর উজানে একটি মারমা বসতী। মারমা ভাষায় 'খুম' মানে হচ্ছে জলপ্রপাত। নাফাখুম জলপ্রপাত। রেমাক্রি জলপ্রপাত নামেও এটা অনেকের কাছে পরিচিত। রেমাক্রি খালের পানি প্রবাহ এই নাফাখুমে এসে বাঁক খেয়ে হঠাৎ করেই নেমে গেছে প্রায় ২৫-৩০ ফুট, প্রকৃতির খেয়ালে সৃষ্টি
হয়েছে চমৎকার এক জলপ্রপাত! ভরা বর্ষায় রেমাক্রি খালের জলপ্রবাহ নিতান্ত কম নয়, প্রায় যেন উজানের সাঙ্গু
নদীর মতই। নাফাখুম কিছুটা দুর্গম। বিশেষ করে, বৃষ্টিবাদলার দিনগুলোয়। রেমাক্রি থেকে তিন ঘন্টার হাঁটা পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয়
আশ্চর্য সুন্দর সেই জলপ্রপাতে, গত আগস্টে ছিল
আমাদের নাফাখুম অভিযান। প্রথমে ঢাকা থেকে বান্দরবন। সেখান থেকে ৭৯
কিলোমিটারের পথ। গাইড মংখাই আমাদের
সঙ্গী। মংখাইয়ের সঙ্গে কথা বলে আগেই রুট ঠিক করেছি। শুরু হলো বান্দরবন থেকে গাড়ির চড়াই-উতরাই পেরোনো পথ। পাহাড়ি পথের ধারে মিশ্র ফল বাগান, আদিবাসীদের চলাচল সবই মুগ্ধ করে। একে একে আমরা পার হই মিলনছড়া, নীলগিরি, চিম্বুক, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাস্তা 'পিক ৬৯', বাঘাইছড়া। মাঝেমধ্যে আমরা থামি, ছবিটবি তুলি;
আবার চলতে থাকি আনন্দের জিম্মায়। ঘণ্টাতিনেক পরে
গাড়ি পৌঁছায় থানচির এপারে শঙ্খ নদীর পাড়ে। পাহাড়িদের কাছে এ নদীর নাম সাঙ্গু। এই সাঙ্গু বেয়েই
আমাদের উঠতে হবে রেমাক্রি
বাজারে।
গাড়ি ও নৌকার পালা শেষ রেমাক্রি বাজারেই। এবার ট্রেকিং মানে হাঁটাপথ। রেমাক্রি বাজারে সাঙ্গু বাঁক নিয়েছে। এ বাঁকে এসে পড়েছে রেমাক্রি খাল। খালের শুরুটা নাফাখুম জলপ্রপাতে। পাথুরে খালের দুই পাড় হাঁটার জন্য বন্ধুর। মাঝেমধ্যে জুম চাষের পাহাড়ে বা ঝিরির পানিতে স্নানরত এক-দুজন আদিবাসী ছাড়া কোনো মানুষও চোখে পড়ে না। এরপর পথ আরো জটিল। কাদা, পাথরের সঙ্গে যোগ হয়েছে ঝোপঝাড়। আরো প্রায় আধাঘণ্টা হাঁটার পর শোনা গেল পানির শব্দ। দেখা মিলল শুভ্র জলরাশির নাফাখুম জলপ্রপাত। প্রায় ১৫-২০ ফুট ওপর থেকে পানি পড়ছে নিচের রেমাক্রি খালে। তীব্র স্রোত তৈরি করে চলে যাচ্ছে সাঙ্গু নদীর দিকে। জলপ্রপাতের প্রস্থ ৪০ ফুটের কম না। দুদিকে বড় পাথরের দেয়াল। এমন জলপ্রপাত বাংলাদেশে, বিশ্বাসই যেন হতে চায় না। দেড় ঘণ্টার মতো আমরা নাফাখুম দেখলাম, মুগ্ধ হলাম। আবার হাঁটতে হবে আট কিলোমিটার বন্ধুর পথ। দিনের আলো থাকতেই পেঁৗছাতে হবে রেমাক্রি বাজারে। ফেরার সময় বিরতিহীন হাঁটা। যে পথে যেতে সময় লেগেছিল ছয় ঘণ্টা, ফিরতে লাগল দেড় ঘণ্টা।
যেভাবে যাবেন
বাসে ঢাকা থেকে বান্দরবান, ভাড়া ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা। চান্দের গাড়ি বা ভাড়া করা ফোর হুইল ড্রাইভ গাড়িতে থানচি। চান্দের গাড়ির ভাড়া জনপ্রতি ২০০ আর গাড়ি ভাড়া করলে তিন হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। থানচি থেকে রেমাক্রি নৌকায় যাওয়া-আসা, ভাড়া ৪ হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা।
থাকা :
থানচি, তিন্দু বা রেমাক্রি বাজারে কাঠের ঘরে থাকা যাবে। থাকার জন্য টাকা লাগবে
না, তবে খাওয়ার জন্য প্রতি বেলায় জনপ্রতি লাগবে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। এছাড়া গাইডের সহযোগিতায় আদিবাসী গ্রামেও থাকা যেতে পারে। বান্দরবানে রোমাঞ্চকর
এরকম দারুণ সুন্দর জায়গাগুলো নিয়ে আমরা তো গর্ব করতেই পারি, বেরিয়ে যেতে পারি অভিযানে।
ছবিঘরঃ
নাফাখুম
(চিত্র-১)
নাফাখুম
(চিত্র-২)
নাফাখুম
(চিত্র-৩)
নাফাখুম
(চিত্র-৪)
নাফাখুম
(চিত্র-৫)
নাফাখুম
(চিত্র-৬)
নাফাখুম
(চিত্র-৭)
No comments:
Post a Comment