Pages

Sunday, September 28, 2014

নীলগিরি



নীলগিরির সাধারণ বিবরণ



আপনি কি আকাশ ছুঁতে চান? তাহলে চলে আসুন বান্দরবানের অন্যতম পর্যটন স্পট নীলগিরিতেআকাশ ছুঁয়ে দেখা যায় বান্দরবানের এই নীলগিরি পর্যটন স্পটেজেলা সদর থেকে ৪৭ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের চূড়ায় নীলগিরির অবস্থানযে কোনো গাড়িতে চড়ে সরাসরি নীলগিরিতে যাওয়া যায়সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে এর উচ্চতা ২ হাজার ২ শত ফুটএকানকার প্রকৃতির কারুকাজ সবাইকে মুগ্ণ করে এই রোদ, এই বৃষ্টি, আকাশে মেঘের গর্জন সেই সাথে রংধনুর হাসিমাখা আলোএক রুশ্মি, বাতাসের সাথে ছন্দ আর তাল মিলিয়ে প্রকৃতির বৈবিত্র্যময় এই পরিবর্তনের এই পরিবর্তনের দৃশ্যগুলো পর্যটকদের আকৃষ্ট করেঅল্প সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত পর্যটন স্পট নীলগিরি সারাদেশে পরিচিতি লাভ করেছে


নীলগিরি


বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন কর্তৃক চিম্বুক-থানচি সড়কটি নির্মাণের সময় ম্রো জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত বান্দরবান থানিছ সড়কের কাপ্রু পাড়া এলাকায় প্রথমে নিরাপত্তা চৌকি হিসেবে এটি নিমিত হয়পরবর্তীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাএদর পরিকল্পনায় এটি একটি পর্যটন কেন্দ্রের পূর্ণতা লাভ করেএখানে মেঘদূত, আকাশনীলা, নীলাঙ্গনা, মারমা হাউজসহ নানা নামের আকর্ষীয় কটেজ রয়েছেআছে একটি ক্যাফেটেরিয়াবর্তমানে দেশি বিদেশি পর্যটকরা প্রতিদিনই নীলগিরি ভ্রমণে আসছেনপাহাড়ি আঁকা-বাঁকা পথে বান্দরবান থেকে চাঁদের গাড়ি কিংবা জীপ-মাইক্রো বাসে নীলগিরিতে যাওয়া যায়


নীলগিরি রিসোর্টের কটেজ আকাশলীনা এবং মেঘদূত


নীলগিরি রিসোর্ট


নীলগিরি ক্যাফেটেরিয়া



নীলগিরি যেন প্রকৃতির এক অনন্য দানযারা আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখেন নীলগিরিতে গেলে তার কিঞ্চিত স্বপ্ন পূরণ হতে পারেনীলগিরিতে গেলে মনে হবে আপনি আকাশের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেনমেঘেরা নিজ থেকেই আপনাকে ছুঁয়ে যাবেনীলগিরির চূড়া থেকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাহাড় কেওক্রাডং, প্রাকৃতিক আশ্চর্য বগালেক, কক্সবাজারের সমুদ্র, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের আলো-আঁধারি বাতি এবং চোখ জুড়ানো পাহাড়ের সারিও দেখতে পাওয়া যায়



নীলগিরি মেঘ


মেঘে ঢাকা সকালের নীলগিরি



নীলগিরির কাছাকাছি রয়েছে বেশ কয়েকটি ম্রো উপজাতীয় গ্রামনীলগিরির একদম কাছে কাপ্রু পাড়া, আপনি সহজেই পরিদর্শন করে ম্রো আদিবাসী সম্পর্কে জানতে পারবেননীলগিরিতে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্পফলে এখানে নিরাপত্তার কোন ঘাটতি নেইআপনার যে কোন প্রয়োজনে সেনা সদস্যরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে


নীলগিরির আর্মি ক্যাম্প


নীলগিরির রাতের সৌন্দর্য আরো হতবাক করেচারিদিকের হরিণ, শিয়ালসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণীর ডাক আর পাহাড়গুলোর আলো-আঁধারির খেলা দেখে আপনার জীবনকেই যেন রহস্যময় বলে মনে হবেযারা এডভেঞ্চার পছন্দ করেন তাদের জন্য রাতের নীলগিরি হতে পারে উৎকৃষ্ট স্থাননীলগিরি যাওয়ার পথে আপনি দেখে যেতে পারেন বান্দরবানের অপার সৌন্দর্যময় শৈলপ্রপাতএখানে আদিবাসী বম তরুণীরা আপনাকে স্বাগত জানাবেএখান থেকে কিনে নিতে পারেন আদিবাসীদের হাতের তৈরি নানা পণ্যএর পরই চোখে পড়বে স্বপ্নচূড়াস্বপ্নচূড়া থেকেও বান্দরবানের অবাক করা সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়



নীলগিরি থেকে দূরের দৃশ্য - ১




নীলগিরি থেকে দূরের দৃশ্য - ২



নীলগিরি থেকে দূরের দৃশ্য - ৩




স্বপ্নচূড়ার পরই বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুকে পৌঁছে যাবেন আপনিচিম্বুকের সুনাম সারা দেশব্যাপীএখানে রয়েছে টি এন্ড টির বিশাল টাওয়ার, উন্নয়ন বোর্ড তৈরি করেছে সকল সুবিধা সম্বলিত রেস্ট হাউসসড়ক ও জনপথ বিভাগের পুরনো একটি রেস্ট হাউসও রয়েছে এখানে


নীলগিরির পথ



আকাশ মেঘে ঢাকা


চিম্বুকে পৌঁছেই স্থানীয় আদিবাসীদের হাতের তৈরি এক কাপ চা খেয়ে নিজেকে চাঙ্গা করে রওয়ানা দিতে পারেন নীলগিরির দিকেঅথবা এর একটু দূরেই সেনাবাহিনী পরিচালিত ক্যান্টিন রয়েছেএখানে আপনি সেরে নিতে পারেন দুপুরের খাবার অথবা হালকা খাবার



নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে রয়েছে অপার সম্ভাবনাঅল্প সময়ের মধ্যেই দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ করতে সম্ভব সব কিছুর ব্যবস্থা করা হয়েছে এখানেঅতি কম সময়ে এটি পরিচিতিও লাভ করেছেপ্রতিদিন শত শত পর্যটক আসছে এখানে স্থানীয়দের ধারণা অদূর ভবিষ্যতে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র হবে পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটএছাড়াও স্পটটিকে ঘিরে সরকারেরও রয়েছে নানা পরিকল্পনাসরাসরি গাড়ি নিয়ে নীলগিরি চূড়ায় আরোহণ করা যায়ফলে পাহাড়ি পথে কোন দুর্ঘটনার ভয় নেই



নীলগিরির সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এখান থেকে চোখে পড়ে বান্দরবানের উপর দিয়ে বয়ে চলা সর্পিল সাঙ্গু নদীএখান থেকে মনে হবে সাঙ্গু নদী আপনার খুব কাছেসাঙ্গু নদীর অপরূপ সৌন্দর্য এখান থেকে উপভোগ করা যায়সাঙ্গুর বুক চিরে বয়ে চলা ছোট ছোট নৌকাগুলোকে দেখলে দূর থেকে মনে হবে স্বপ্নের কোন ডিঙি বয়ে চলছে সাঙ্গু নদী দিয়ে


সাঙ্গু নদী


সাঙ্গুর কোলে মেঘ


ভিআইপিদের সরাসরি অবতরণের জন্য এখানে নির্মাণ করা হয়েছে হেলিপ্যাডওতবে সাধারণ দর্শনার্থীদের হেলিপ্যাডে প্রবেশ করা নিষেধ নীলগিরিতে সৃষ্টি করা হয়েছে ফুলের বাগান,পাহাড়ের উপরে সুন্দর এই ফুলের বাগানও অবাক করার মতনীলগিরিতে যাওয়ার জন্য বান্দরবান হিলবার্ড এর সামনেই রয়েছে নানা ধরনের গাড়িআপনার পছন্দের গাড়িটি ভাড়া করে চলে যেতে পারেন নীলগিরিতেতবে কটেজ বুকিং এর জন্য আগে থেকেই কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে হবে


নীলগিরির হেলিপ্যাড


থাকা ও খাওয়া


আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত এই নীলিগিরি রিসোর্টে অবস্থান ও রাত্রিযাপনের জন্য সেনাবাহিনীর  বান্দরবান ব্রিগেড হেডকোয়াটার এর সাথে আগাম যোগাযোগ করতে হয়প্রকৃতির অপরুপ মনমুগ্ধকর নয়নাভিরাম এই দৃশ্যগুলি পর্যটকদের স্মৃতিতে ধরে রাখার জন্য নীলগিরি রিসোর্ট অত্যন্ত চমকার একটি স্থানএই স্থানটি অনেকের নিকট বাংলার দার্জিলিং নামে পরিচিত  কটেজগুলো রাত্রি যাপনের জন্য ভাড়া পাওয়া যায় ৫,০০০ (পাঁচ হাজার) থেকে ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকার মধ্যে; এখানে তাঁবুর ব্যবস্থা আছে মাত্র ১,০০০ (এক হাজার) টাকার মধ্যে। এখানে এক কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয়েছে অত্যাধুনিক একটি রেস্টুরেন্টওপাহাড়ি পথ পেরিয়ে নীলগিরিতে পৌঁছেই রেস্টুরেন্টে পেট পুরে খেতে পারা যায়

No comments: