Pages

Saturday, September 27, 2014

বগাকাইন হ্রদ (বগা লেক)



বগাকাইন হ্রদ বা বগা হ্রদ বা স্থানীয় নামে বগা লেক বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার স্বাদু পানির একটি হ্রদ বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে বগাকাইন হ্রদের অবস্থান কেওক্রাডং পর্বতের গা ঘেষে, রুমা উপজেলায়সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৩,৫০০ ফুট (কিওক্রাডং-এর উচ্চতা ৩,১৭২ ফুট)ফানেল বা চোঙা আকৃতির আরেকটি ছোট পাহাড়ের চুড়ায় বগা লেকের অদ্ভুত গঠন অনেকটা আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের মতো

অবস্থান

রুমা উপজেলার পূর্ব দিকে শঙ্খ নদীর তীর থেকে ২৯ কিলোমিটার অভ্যন্তরে অবস্থিত একটি মৌজার নাম 'নাইতং মৌজা'এই মৌজার পলিতাই পর্বতশ্রেণীর অন্তর্গত একটি পাহাড়ের চূড়ায় হ্রদটি অবস্থিত


বগা লেক

উৎপত্তি ও গঠন

বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিকগণের মতে বগাকাইন হ্রদ মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ কিংবা মহাশূন্য থেকে উল্কাপিণ্ডের পতনের ফলে সৃষ্টি হয়েছেঅনেকে আবার ভূমিধ্বসের কারণেও এটি সৃষ্টি হতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেনএটি ভুবন স্তরসমষ্টির (Bhuban Foundation) নরম শিলা দ্বারা গঠিত এর পানি বেশ অম্লধর্মী এবং একারণে এতে কোনো শ্যাওলা বা অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ নেই, এবং কোনো জলজ প্রাণীও এখানে বাঁচতে পারেনা বলা হলেও ২০০৯-এর তথ্যসূত্রে জানা যায় বগা লেকের পানি অত্যন্ত সুপেয়, এবং লেকের জলে প্রচুর শ্যাওলা, শালুক, শাপলা ও অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ এবং প্রচুর মাছ এমনকি বিশালাকার মাছ রয়েছে

ইতিহাস

বগালেকের পাশে একটি বম পাড়া (বগামুখপাড়া) এবং একটি মুরং পাড়া আছেস্থানীয় আদিবাসীরা বম, মুরং বা ম্রো, তঞ্চংগ্যা এবং ত্রিপুরাসহ অন্যান্য আদিবাসীস্থানীয় আদিবাসীদের উপকথা অনুযায়ী, অনেক কাল আগে পাহাড়ের গুহায় একটি ড্রাগন বাস করতোবম ভাষায় ড্রাগনকে "বগা" বলা হয়ড্রাগন-দেবতাকে তুষ্ট করতে স্থানীয়রা গবাদী পশু উৎসর্গ করতেন কিন্তু একবার কয়েকজন এই ড্রাগন দেবতাকে হত্যা করলে চূঁড়াটি জলমগ্ন লেকে পরিণত হয় এবং গ্রামগুলোকে ধ্বংস করে ফেলেযদিও এই উপকথার কোনো বাস্তব প্রমাণ নেই, তবুও উপকথার আগুন উদগীরণকারী ড্রাগন বা বগা এবং হ্রদের জ্বালামুখের মতো গঠন মৃত আগ্নেয়গিরির ধারণাটির সাথে মিলে যায়

সাধারণ বর্ণনা

এই হ্রদটি তিনদিক থেকে পর্বতশৃঙ্গ দ্বারা বেষ্টিতএই শৃঙ্গগুলো আবার সর্বোচ্চ ৪৬ মিটার উঁচু বাঁশঝাড়ে আবৃতএটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৫৭ মিটার ও ৬১০ মিটার উচ্চতার মধ্যবর্তী অবস্থানের একটি মালভূমিতে অবস্থিতএর গভীরতা হচ্ছে ৩৮ মিটার (১২৫ ফুট)এটি সম্পূর্ণ আবদ্ধ হ্রদএ থেকে পানি বের হতে পারে না এবং কোনো পানি ঢুকতেও পারে নাএর আশেপাশে পানির কোনো দৃশ্যমান উৎসও নেইতবে হ্রদ যে উচ্চতায় অবস্থিত তা থেকে ১৫৩ মিটার নিচে একটি ছোট ঝর্ণার উৎস আছে যা বগা ছড়া নামে পরিচিতহ্রদের পানি কখনও পরিষ্কার আবার কখনওবা ঘোলাটে হয়ে যায়কারণ হিসেবে অনেকে মনে করেন এর তলদেশে একটি উষ্ণ প্রস্রবণ রয়েছেএই প্রস্রবণ থেকে পানি বের হওয়ার সময় হ্রদের পানির রঙ বদলে যায়


বান্দরবান জেলার বগা লেক

পর্যটন

স্থানীয় অধিবাসীদের ধারণা এই হ্রদের আশেপাশে দেবতারা বাস করেএজন্য তারা এখানে পূজা দেন তবে রহস্যময় উপকথা এবং অকল্পনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বগাকাইন হ্রদকে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রেকিং এবং ক্যাম্পিং এলাকায় পরিণত করেছে বিশেষ করে কিওক্রাডং যেতে হলে বগাকাইন হ্রদে যাত্রাবিরতি ছাড়া গত্যন্তর নেইতবে এখানকার যাতায়াত ব্যবস্থা বেশ দুর্গম; অত্যন্ত দুর্গম পথে পায়ে হাঁটা ছাড়া গত্যন্তর নেই অতি সম্প্রতি (২০১০) রুমা থেকে সরাসরি বগামুখপাড়ায় জীপ (চান্দের গাড়ি বা চাঁদের গাড়ি) চালু হয়েছেতবে এ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আর বুনো জীবনের লোভে ঝিরির পথ  নামের আরেকটা পথ ব্যবহার করে থাকেনবগাকাইন হ্রদে একটি সেনা ক্যাম্প এবং দুটি থাকার জায়গা রয়েছে, যার একটি স্থানীয় বমদের দ্বারা চালিত, আর অন্যটি সরকার-চালিতরয়েছে একটি স্কুল ও একটি গির্জাওবর্তমানে পর্যটকদের যথেচ্ছ আচরণে হ্রদটির প্রাণবৈচিত্র্য এবং নিকট-অরণ্যের প্রাণবৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখিন

যাতায়তঃ

শুষ্ক মৌসুমে বান্দরবান জেলা সদরের রুমা জীপ ষ্টেশন থেকে রুমাগামী জীপে করে রুমা সেনা গ্যারিসন (রুমা ব্রীজ) পর্যন্ত যাওয়া যায়। সেখান থেকে নৌকায় করে ২০ মিনিট পথ পাড়ি দিয়ে রুমা উপজেলা সদরে যেতে হয়। বর্ষাকালে রুমাগামী জীপ কইক্ষ্যংঝিড়ি পর্যন্ত যায় । তারপর ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে প্রায় ১ ঘন্টার অধিক পথ পাড়ি দিয়ে রুমা সদরে যেতে হয় । রুমা থেকে পায়ে হেটে অথবা জীপে করে বগালেক যেতে হয় । বর্ষা মৌসুমে বগা লেক যাওয়া নিতান্তই কষ্টসাধ্য তাই বগালেক ভ্রমনে শীতকালকে বেছে নেওয়া শ্রেয়ে। বান্দরাবন থেকে রুমা উপজেলা সদরে যেতে খরচ হবে জন প্রতি ৮০/- অথবা পুরো জীপ ভাড়া করলে ২২০০-২৫০০/- আর রুমা থেকে বগালেক যেতে জনপ্রতি ৮০-১০০/- অথবা পুরো জীপ ভাড়া করলে ২২০০-২৫০০/- পর্যন্ত

ক্যামেরার ফ্রেমে বগা লেক


বগাকাইন হ্রদে আলোর খেলা




চির সবুজ বগাকাইন হ্রদ


বগাকাইন হ্রদ সংলগ্ন বগামুখপাড়া



শীতের কুয়াশায় বগাকাইন হ্রদ

No comments: