বুদ্ধ ধাতু
জাদি (স্বর্ণ মন্দির)
অবস্থান ও বিবরণঃ
প্রায় ষোলশ’
ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের চূড়ায় স্থাপত্যের অপূর্ব নির্দেশণ
বৌদ্ধ ধাতু স্বর্ণ জাদী। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কাছে এটি তীর্থ স্থান হলেও পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি বান্দরবানের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর
মধ্যে অন্যতম একটি হল বুদ্ধ ধাতু
জাদি ক্যাং (স্বর্ণ মন্দির)। বান্দরবানে
বসবাসরত ১১টি পাহাড়ী জনগোষ্ঠীসহ ১৪টি সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছেও বৌদ্ধ ধাতু স্বর্ণ
জাদী পবিত্র স্থান। স্থাপত্যকলার
অপূর্ব নিদর্শন ও মনোরম বৌদ্ধ
ধর্মীয় আবেগের
সংমিশ্রনে নির্মিত এ জাদি বান্দরবান শহর থেকে ১.০৫ কিঃ মিঃ দূরে বালাঘাটায় অবস্থিত। এই জাদিটি এখন বৌদ্ধ সমপ্রদায়ের তীর্থ স্থানই নয় দেশী বিদেশী পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষনীয়
স্পটে পরিণত হয়েছে। অপূর্ব নির্মাণ শৈলী ও নানা কারুকার্য খচিত এ জাদি
দেখে মনে হবে যেন আপনি অন্য
দেশে অবস্থান করছেন।
বুদ্ধ ধাতু জাদি (চিত্র-১)
বান্দরবানের
উপ-শহর বালাঘাটা হয়ে
অল্প কিছুদূর গেলেই প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের চুড়ায় চোখে পড়বে সোনালী কারুকার্যখচিত এই জাদিটি। স্থাপত্যকলার নিদর্শন এ
বুদ্ধ ধাতু জাদিই নয়,এ যেন এক মনোরম দর্শনীয় স্থান। পার্বত্য বান্দরবানে গড়ে ওঠা এ জাদি শুধু বাংলাদেশে নয় বিদেশে ও নাম করা। এছাড়া বান্দরবানের
আনাচে-কানাচে ইতিমধ্যেই গড়ে উঠেছে বৌদ্ধ
সমপ্রদায়ের আর ও কয়েকটি জাদি ও ক্যাং। এ ক্যাং গুলো শুধু
বান্দরবানের সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করেনি,
দিনদিন আকৃষ্ট করছে অসংখ্য দেশী বিদেশী পর্যটকে। ইতিমধ্যে এ জাদি
পরিদর্শনে এসেছেন মায়ানমারের
সাবেক প্রধানমন্ত্রী
খিন নিউন - ও মন্ত্রীপরিষদবর্গ, ভারতের হাইকমিশনারসহ বিপুল সংখ্যক দেশী বিদেশী পর্যটক। এর নির্মাণশৈলী দেখে
অভিভূত হয়েছেন তারা।
বুদ্ধ ধাতু জাদি (চিত্র-২)
বান্দরবানের
কয়েকটি দর্শনীয় স্থানের
মধ্যে বুদ্ধ ধাতু জাদি ক্যাং অন্যতম। মায়ানমারের
কয়েকটি বৌদ্ধ তীর্থ
স্থানের আদলে ২০০০ সালে প্রায় ৩শ ফুট পাহাড়ের চূড়ায় বিহারাধ্যক্ষ উপঞা জোতথেরো (প্রকাশ উছালা ভানে-)এই বৌদ্ধ
বিহারটি নির্মানে ব্যাপক ভুমিকা পালন
করেন। মায়ানমারের শোয়েডাগং
প্যাগোডা, সুলে প্যাগোডা, শোয়েডং
নিয়াত প্যাগোডা সহ ৫টি প্যাগোডার অনুকরণে বান্দরবানে বুদ্ধ জাদিটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে জাদি সুত্র জানায়। এটি নির্মাণের পর থেকে
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের
ধর্মপ্রাণ নর-নারীরা পূন্য লাভের আশায় প্রতিবছর বুদ্ধ ধাতু জাদি পরিদর্শনে আসেন। শুধু বাংলাদেশ নয় প্রতিবেশী মায়ানমার, থাইল্যান্ড সহ বৌদ্ধ
প্রধান রাষ্ট্রগুলোতেও এর সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে দিন দিন। প্রতিবছর
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে বৌদ্ধ ধাতু জাদী এলাকায় বসে মেলা। সপ্তাহ বা মাসব্যাপি চলে এই বৌদ্ধ ধাতু জাদি মেলা। এতে অংশ নেয় হাজার
হাজার পূণ্যার্থী ও দেশ
বিদেশের পর্যটকরা।
বুদ্ধ ধাতু জাদি (চিত্র-৩)
বিহারাধ্যক্ষ
উপঞা জোতথেরো জানান, মায়ানমারের প্রধানমন্ত্রী এই ধাতু জাদিটি দেখতেই বান্দরবানে এসেছিলেন। তিনি জানান,
প্রধানমন্ত্রী খিন নিউন-
মায়ানমারের সেক্রেটারী-১ থাকাকালীন
বান্দরবান বুদ্ধ ধাতু জাদিটির জন্য ব্যক্তিগতভাবে ৫ লক্ষ কিয়েট অনুদান প্রদান করেন। বিহারটিতে ভিক্ষু শ্রমন মিলে মোট ২০ জন অনাথ রয়েছে।
বুদ্ধ ধাতু জাদি (চিত্র-৪)
সমপ্রতি
মায়ানমারের
প্রধানমন্ত্রী খিন নিউন- জাদি পরিদর্শনের পর এটির উন্নয়নে ৪০ হাজার মার্কিন ডলার অনুদান ঘোষনা করেন। এ অনুদানের টাকায় নির্মিত হচ্ছে লাইব্রেরী, মিউজিয়াম ও অন্যান্য
স্থাপনা। এছাড়া ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ
নরনারীরাও ব্যক্তিগতভাবে এ কেয়াং
এর উন্নয়নে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে।
বুদ্ধ ধাতু জাদি (চিত্র-৫)
বান্দরবান
শহর থেকে দেড় কিলোমিটার
রাস্তা পাড়ি দিয়ে বালাঘাটার পরেই এ বুদ্ধ ধাতু জাদি কেয়াংটি। খুব সহজেই চোখে পড়বে ৩০০ ফুট পাহাড়ের চুড়ায় নির্মিত এ কেয়াং
এর নয়নাভিরাম নির্মাণশৈলী। কেয়াং এর শীর্ষে আরোহন করতে একটু বেগ পেতেই হয়। দীর্ঘ আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ও ১৭০ ধাপ সিঁড়ি বেয়ে যেতে হয়
সেখানে। তবে একটু কষ্ট করে উঠতে পারলেই চারিদিকের আকর্ষনিয়
দৃশ্য পাহাড়ে ওঠার ক্লানি- ম্লান
করে দেবে। কেয়াং এর মূল প্রবেশপথ
দিয়ে ঢুকেই প্রথমে চোখে পড়বে বৌদ্ধ
মিউজিয়াম। মিউজিয়ামে থরে থরে
সাজানো রয়েছে গৌতম বুদ্ধের সময়ের বিভিন্ন ঘটনাপঞ্জির
বাহারি মূর্তি। এসব মূর্তির নির্মাণ
কাজে রয়েছে অভিজ্ঞতার ছাপ। বিহারাধ্যক্ষ উপঞা জোত
থেরো জানান, মায়ানমারের বিখ্যাত সব কারিগরদের নিপূণ হাতের ছোঁয়া রয়েছে প্রতিটি কাজে। মিউজিয়াম পেরিয়েই কেয়াং
এর মূল প্রবেশপথ। কেয়াং এর শীর্ষে আরোহন করতে করতে আপনার চোখে
পড়বে বান্দরবান শহরের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য। কেয়াং এর চুড়ায় বাতাসের
দোলায় টুংটাং করে বাজতে থাকা
ঘন্টার ধ্বনি যে কাউকেই
এক অন্যরকম আবেশে মোহিত করে রাখে। এ চুড়া থেকেই
চোখে পড়বে দেবনাগ রাজ
পুকুর(দেবতা পুকুর) সহ কেয়াং এর অন্যান্য স্থপত্য কলা। এ দেবতা পুকুরটি সাড়ে ৩০০ ফুট উচুতে হলে ও সব মওসুমেই পানি
থাকে। বৌদ্ধ ভানে-দের মতেএটা দেবতার পুকুর তাই এখানে সব
সময় পানি থাকে।
বুদ্ধ ধাতু জাদি (চিত্র-৬)
সন্ধ্যা ছয়টার
পরে মন্দিরে সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষেধ। মন্দির চত্ত্বরে
শর্টপ্যান্ট, লুঙ্গি এবং জুতাপায়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ।
No comments:
Post a Comment