Pages

Friday, September 26, 2014

সেন্ট মার্টিন্‌স দ্বীপ



সেন্ট মার্টিন্‌স দ্বীপ

সেন্ট মার্টিন্‌স দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি প্রবাল দ্বীপএটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মায়ানমার-এর উপকূল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিতপ্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে একে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়ে থাকে


সেন্ট মার্টিন্‌স দ্বীপ নারিকেল গাছ

ইতিহাস

কবে প্রথম এই দ্বীপটিকে মানুষ শনাক্ত করেছিল তা জানা যায় নাপ্রথম কিছু আরব বণিক এই দ্বীপটির নামকরণ করেছিল জিঞ্জিরাউল্লেখ্য এরা চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যাতায়াতের সময় এই দ্বীপটিতে বিশ্রামের জন্য ব্যবহার করতোকালক্রমে চট্টগ্রাম এবং তৎসংলগ্ন মানুষ এই দ্বীপটিকে জিঞ্জিরা নামেই চিনতো১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে কিছু বাঙালি এবং রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ এই দ্বীপের বসতি স্থাপনের জন্য আসেএরা ছিল মূলত মৎস্যজীবিযতটুকু জানা যায়, প্রথম অধিবাসী হিসাবে বসতি স্থাপন করেছিল ১৩টি পরিবারএরা বেছে নিয়েছিল এই দ্বীপের উত্তরাংশকালক্রমে এই দ্বীপটি বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় পরিণত হয়আগে থেকেই এই দ্বীপে কেয়া এবং ঝাউগাছ ছিলসম্ভবত বাঙালি জেলেরা জলকষ্ঠ এবং ক্লান্তি দূরীকরণের অবলম্বন হিসাবে প্রচুর পরিমাণ নারকেল গাছ এই দ্বীপে রোপণ করেছিলকালক্রমে পুরো দ্বীপটি একসময় 'নারকেল গাছ প্রধান' দ্বীপে পরিণত হয়এই সূত্রে স্থানীয় অধিবাসীরা এই দ্বীপের উত্তরাংশকে নারিকেল জিঞ্জিরা নামে অভিহিত করা শুরু করে১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ব্রিটিশ ভূ-জরীপ দল এই দ্বীপকে ব্রিটিশ-ভারতের অংশ হিসাবে গ্রহণ করেজরীপে এরা স্থানীয় নামের পরিবর্তে খ্রিষ্টান সাধু মার্টিনের নামানুসারে সেন্ট মার্টিন নাম প্রদান করেএরপর ধীরে ধীরে এই অঞ্চলের বাইরের মানুষের কাছে, দ্বীপটি সেন্ট মার্টিন নামেই পরিচিত লাভ করে

সেন্ট মার্টিন্‌স দ্বীপ (চিত্র- ১)

সেন্ট মার্টিন্‌স দ্বীপ (চিত্র- ২)

সেন্ট মার্টিন্‌স দ্বীপ (চিত্র- ৩)

সেন্ট মার্টিন্‌স দ্বীপ (চিত্র- ৪)

সেন্ট মার্টিন্‌স দ্বীপ এর কোরাল

ভৌগোলিক আয়তন

সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের আয়তন প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার ও উত্তর-দক্ষিণে লম্বাএ দ্বীপের তিন দিকের ভিত শিলা যা জোয়ারের সময় তলিয়ে যায় এবং ভাটার সময় জেগে ওঠেএগুলোকে ধরলে এর আয়তন হবে প্রায় ১০-১৫ বর্গ কিলোমিটারএ দ্বীপটি উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় ৫.৬৩ কিলোমিটার লম্বা দ্বীপের প্রস্থ কোথাও ৭০০ মিটার আবার কোথাও ২০০ মিটারদ্বীপটির পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে সাগরের অনেক দূর পর্যন্ত অগণিত শিলাস্তূপ আছেসমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের গড় উচ্চতা ৩.৬ মিটারসেন্ট মার্টিন্সের পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিক জুড়ে রয়েছে প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার প্রবাল প্রাচীর
ভৌগোলিকভাবে এটি তিনটি অংশে বিভক্তউত্তর অংশকে বলা হয় নারিকেল জিনজিরা বা উত্তর পাড়াদক্ষিণাঞ্চলীয় অংশকে বলা হয় দক্ষিণ পাড়া এবং এর সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে দক্ষিণ-পূর্বদিকে বিস্তৃত একটি সঙ্কীর্ণ লেজের মতো এলাকা এবং সঙ্কীর্ণতম অংশটি গলাচিপা নামে পরিচিতদ্বীপের দক্ষিণে ১০০ থেকে ৫০০ বর্গমিটার আয়তনের ছোট দ্বীপ আছে যা স্থানীয়ভাবে ছেড়াদিয়া  বা সিরাদিয়া  নামে পরিচিতএটি একটি জনশূন্য দ্বীপভাটার সময় এই দ্বীপে হেটে যাওয়া যায়তবে জোয়ারের সময় নৌকা প্রয়োজন হয়



সেন্ট মার্টিন্‌স, ছেঁড়া দ্বীপ

ভূপ্রকৃতি
সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপটির ভূপ্রকৃতি প্রধানত সমতলতবে কিছু কিছু বালিয়াড়ি দেখা যায়এ দ্বীপটির প্রধান গঠন উপাদান হলো চুনাপাথর দ্বীপটির উত্তর পাড়া এবং দক্ষিণ পাড়া দুজায়গারই প্রায় মাঝখানে জলাভূমি আছেএগুলো মিঠা পানি সমৃদ্ধ এবং ফসল উৎপাদনে সহায়কদ্বীপটিতে কিছু কৃষি উৎপাদন হয়ে থাকেতবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম

প্রাণিবৈচিত্র্য

সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপে প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১শ ৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১শ ৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১শ ৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভিদ,২শ ৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, চার প্রজাতির উভচর ও ১শ ২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়স্থানীয়ভাবে পেজালা নামে পরিচিত Sea weeds বা অ্যালগি (Algae) এক ধরণের সামুদ্রিক শৈবাল সেন্ট মার্টিন্সে প্রচুর পাওয়া যায় এগুলো বিভিন্ন প্রজাতির হয়ে থাকে তবে লাল অ্যালগি (Red Algae) বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয়এছাড়াও রয়েছে ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রানী অমেরুদন্ডী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে স্পঞ্জ, শিল কাঁকড়া, সন্যাসী শিল কাঁকড়া,লবস্টার ইত্যাদিমাছের মধ্যে রয়েছে পরী মাছ, প্রজাপতি মাছ, বোল করাল,রাঙ্গা কই, সুঁই মাছ, লাল মাছ,উড়ুক্কু মাছ ইত্যাদি সামুদ্রিক কচ্ছপের (গ্রিন টার্টল ও অলিভ টার্টল প্রজাতি) ডিম পাড়ার স্থান হিসেবে জায়গাটি খ্যাত

উদ্ভিদবৈচিত্র

দ্বীপে কেওড়া বন ছাড়া প্রাকৃতিক বন বলতে যা বোঝায় তা নেইতবে দ্বীপের দক্ষিণ দিকে প্রচুর পরিমাণে কেওড়ার ঝোপ-ঝাড় আছেদক্ষিণ দিকে কিছু ম্যানগ্রোভ গাছ আছেঅন্যান্য উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে কেয়া, শ্যাওড়া, সাগরলতা, বাইন গাছ ইত্যাদি


সেন্ট মার্টিন্‌স দ্বীপে কেয়া বন

অধিবাসী

প্রায় ১০০ থেকে ১২৫ বছর আগে এখানে লোক বসতি শুরু হয়বর্তমানে এখানে সাত হাজারেরও বেশি লোক বসবাস করে দ্বীপের লোকসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছেএখানকার বাসিন্দাদের প্রধান পেশা মাছ ধরাপর্যটক ও হোটেল ব্যবসায়ীরাই প্রধানত তাদের কাছ থেকে মাছ কেনেন ছোট মাছ পাটিতে বিছিয়ে, পিটকালা মাছ বালুতে বিছিয়ে এবং বড় জাতের মাছ পেট বরাবর ফেড়ে মাচায় শুকানো হয়এ ছাড়াও দ্বীপবাসী অনেকে মাছ, নারিকেল, পেজালা এবং ঝিনুক ব্যবসা করে এছাড়াও কিছু মানুষ দোকানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেছোট ছোট শিশুরা দ্বীপ থেকে সংগৃহীত শৈবাল পর্যটকদের কাছে বিক্রি করে থাকেসম্পূর্ণ সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপেই প্রচুর নারিকেল এবং ডাব বিক্রি হয়মায়ানমারের আরাকন থেকে বাংলা ভাষি রোহিঙ্গাদের দ্বীপ অঞ্চলে প্রায়শই দেখা যায়

পর্যটন

দ্বীপটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রপর্যটন মৌসুমে এখানে প্রতিদিন ৫টি লঞ্চ বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড হতে আসা যাওয়া করেসেন্ট মার্টিন্স দ্বীপে বর্তমানে বেশ কয়েকটি ভালো আবাসিক হোটেল রয়েছেএকটি সরকারি ডাকবাংলো আছেসেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল

No comments: