বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি নিম্ন আয়ের উন্নয়নশীল এবং স্থিতিশীল অর্থনীতি। এই অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে রয়েছে মধ্যম হারের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি, পরিব্যাপ্ত দারিদ্র, আয় বণ্টনে অসমতা, শ্রমশক্তির উল্লেখযোগ্য বেকারত্ব, জ্বালানী, খাদ্যশস্য এবং মূলধনী যন্ত্রপাথরি জন্য আমদানী নির্ভরতা, জাতীয় সঞ্চয়ের নিম্নহার, বৈদেশিক সাহায্যের ওপর ক্রমহ্রাসমান নির্ভরতা এবং কৃষি খাতের সংকোচনের সঙ্গে সঙ্গে পরিষেবাখাতের দ্রুত প্রবৃদ্ধি। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অগ্রগতি অর্জন করেছে। বাংলাদেশের তৈরি পোষাক শিল্প বিশ্বের বৃহত্তম শিল্পের মধ্যে অন্যতম । ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের আগে পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত পাট ও পাটজাত পণ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এসময় পাট রপ্তানি করে দেশটি অধিকাংশ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করত। কিন্তু পলিপ্রোপিলিন পণ্যের আগমনের ফলে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকেই পাটজাত দ্রব্যের জনপ্রিয়তা ও বাণিজ্য কমতে থাকে।
বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭০-এর দশকে সর্বোচ্চ ৫৭% প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। তবে এ প্রবৃদ্ধি বেশীদিন টেকেনি। ১৯৮০-এর দশকে এ হার ছিলো ২৯% এবং ১৯৯০-এর দশকে ছিলো ২৪%।
বাংলাদেশ বর্ধিত জনসংখ্যার অভিশাপ সত্ত্বেও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এর মূল কারণ হচ্ছে অভ্যন্তরীন উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ধান উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়। বাংলাদেশের চাষাবাদের জমি সাধারণত ধান ও পাট চাষের জন্য ব্যবহৃত হলেও সাম্প্রতিক সময়ে গমের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে ধান উৎপাদনের দিক দিয়ে মোটামুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ। তা সত্ত্বেও মোট জনসংখ্যার ১০% থেকে ১৫% অপুষ্টির ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশের কৃষি মূলত অনিশ্চিত মৌসুমী চক্র, এবং নিয়মিত বন্য ও খরার উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। দেশের যোগাযোগ, পরিবহন ও বিদ্যুৎ খাত সঠিকভাবে গড়ে না ওঠায় দেশটির উন্নতি ব্যহত হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল খনি রয়েছে এবং কয়লা, খনিজ তেল প্রভৃতির ছোটখাট খনি রয়েছে। বাংলাদেশের শিল্প-কাঠামো দুর্বল হলেও এখানে অদক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা অঢেল এবং মজুরিও সস্তা।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ বিভিন্ন দাতা দেশ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলারেরও অধিক বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণ পেয়েছে যার মধ্যে ১৫ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের প্রধান দাতার মধ্যে রয়েছে বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, সৌদি আরব ও পশ্চিম ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহ। তাসত্ত্বেও বাংলাদেশের দারিদ্রের হার এখনও অনেক বেশি। মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে এবং ভারত ও চীনের পর বাংলাদেশেই সর্বোচ্চ সংখ্যক দরিদ্র মানুষ বসবাস করে। একই আয়ের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সামাজিক সেবার মান অনেক কম। বাংলাদেশে ঐতিহাসিকভাবেই বিরাট বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে এবং এর অর্থনীতি বর্তমানে বিদেশে কর্মরত শ্রমিকের পাঠানো রেমিটেন্সের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সবচেয়ে কম পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের কল্যানে রিজার্ভ স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানের রিজার্ভ প্রায় ৩.১ বিলিয়ন ডলার যা ২০০৬ অর্থবছরের শুরুর দিকে ছিল। ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে সেপ্টেম্বরে রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.৬ বিলিয়ন ডলারে।
বাংলাদেশ-এর অর্থনীতি
|
|
বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স
|
|
অবস্থান
|
১৬৬
|
মুদ্রা
|
বাংলাদেশ টাকা (BDT)
|
অর্থবছর
|
১লা জুলাই - ৩০শে জুন
|
বাণিজ্যিক সংস্থা
|
WTO, SAFTA, D8, WCO
|
পরিসংখ্যান
|
|
জিডিপি
|
$২০৮.৬ বিলিয়ন (২০০৭ খ্রিস্টাব্দের
প্রাক্কলন)
|
জিডিপি প্রবৃদ্ধি
|
৬.৫% (২০০৭ সালের প্রাক্কলন)
|
মাথাপিছু জিডিপি
|
$৫৫০ (২০০৭ সালের প্রাক্কলন)
|
ক্ষেত্র অনুযায়ী জিডিপি
|
কৃষি (১৯%), শিল্প (২৮.৭%), সেবা (৫৩.৭%) (২০০৭ সালের প্রাক্কলন)
|
মুদ্রাস্ফীতি
|
৮.৮০% (২০১০-১১ খ্রিস্টাব্দের
প্রাক্কলন)
|
দারিদ্র সীমার নিচে অবস্থিত জনসংখ্যা
|
৪১.৩% (২০০৭ খ্রিস্টাব্দের প্রাক্কলন)
|
শ্রমশক্তি
|
৬ কোটি ৯০ লক্ষ (২০০৬ সালের প্রাক্কলন)
|
পেশা অনুযায়ী শ্রম
|
কৃষি (৬৫%), শিল্প (২৫%), সেবা (১০%) (২০০৫ সালের প্রাক্কলন)
|
বেকারত্বের হার
|
২.৪% (২০০৮)
|
প্রধান শিল্প
|
পাট উৎপাদন, সুতির টেক্সটাইল,
গার্মেন্টস, চা
প্রক্রিয়াকরণ, নিউজপ্রিন্ট কাগজ, চিনি, হালকা প্রকৌশল, রাসায়নিক
দ্রব্য, সিমেন্ট, সার, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, লোহা,
ইস্পাত
|
বৈদেশিক বাণিজ্য
|
|
রপ্তানি
|
$১৪.১১ বিলিয়ন (২০০৭ সালের প্রাক্কলন)
|
রপ্তানি পণ্য
|
গার্মেন্টস, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চামড়া, হিমায়িত মাছ এবং সামুদ্রিক খাদ্য
|
প্রধান রপ্তানি অংশীদার
|
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৩১.৮%, জার্মানি ১০.৯%, যুক্তরাজ্য ৭.৯%,
ফ্রান্স ৫.২%, নেদারল্যান্ডস
৫.২%,
ইতালি ৪.৪২% (২০০০)
|
আমদানি
|
$২১.৬ বিলিয়ন (২০০৭)
|
আমদানি পণ্য
|
ভারী যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম, রাসায়নিক দ্রব্য, লোহা ও ইস্পাত, তুলা, খাদ্য, অপরিশোধিত তেল, পেট্রোলিয়াম দ্রব্য
|
প্রধান আমদানি অংশীদার
|
ভারত ১০.৫%, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৯.৫%, জাপান ৯.৫%,
সিঙ্গাপুর ৮.৫%,গণচীন
৭.৪% (২০০৪)
|
মোট বৈদেশিক ঋণ
|
$২১.২৩ বিলিয়ন (৩১শে ডিসেম্বর, ২০০৭)
|
সরকারি অর্থসংস্থান
|
|
সরকারি ঋণ
|
$১.২ বিলিয়ন (২০০৫ খ্রিস্টাব্দের
প্রাক্কলন)
|
আয়
|
$৮ বিলিয়ন (২০০৭ খ্রিস্টাব্দের
প্রাক্কলন)
|
ব্যয়
|
$৯ বিলিয়ন (২০০৭ সালের প্রাক্কলন)
|
অর্থনৈতিক সাহায্য
|
$১.৫৭৫ বিলিয়ন (২০০০ খ্রিস্টাব্দের
প্রাক্কলন)
|
মূল উপাত্ত সূত্র:
সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক
মুদ্রা অনুল্লেখিত থাকলে তা মার্কিন ডলার এককে রয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। |
No comments:
Post a Comment